ফুড গ্রেড বেকিং সোডাঃ পেটের স্বাস্থ্যের জন্য খাবার ও ওষুধ

ফুড গ্রেড বেকিং সোডা

বেকিং সোডা (Baking Soda) হল এলকালি (Alkali) বা ক্ষার জাতীয় পদার্থ, যা হল এসিডের বিপরীত পদার্থ। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম বাই কার্বনেট। এসিড (Acid) ও ক্ষার (Alkali)- এ শব্দ দুটি দেহ ও এর রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপকে বুঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পড়ুন: আপনার বডি এসিডিক না এলকালাইন

পড়ুন: এলকালাইন খাবার, এলকালাইন পানিতেই আছে স্বাস্থ্য, সুস্থ্যতা আর প্রশান্তি

বেকিং সোডা কে বলা হয় “ইউনিভার্সেল ন্যাচারাল রিমেডি ফর অল ডিজিজেস” অর্থাৎ সর্ব রোগের সার্বজনিন প্রাকৃতিক নিরাময়কারী।

কেন, কোন অর্থে বেকিং সোডাকে সকল রোগের ওষুধ বলা হয়েছে, চলুন দেখে নিই-

বেকিং সোডা কিভাবে সকল রোগের ওষুধ

আমাদের দেহটা এসিডিক থাকলে সেটা ক্যান্সার সহ সকল রোগের ব্রিডিং গ্রাউন্ড বা প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়।

তাই দেহকে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম রাখতে আমাদের দেহটাকে সর্বদা এলকালাইন করে রাখতে হবে।

মনে রাখা দরকার, শৈশবে আমাদের দেহটা এলকালাইনই ছিল। দিনে দিনে দূষিত, কেমিক্যালযুক্ত, প্রসেস্‌ড খাবারের ফাঁদে আটকে গিয়ে এবং লাইফস্টাইলজনিত নানা কুঅভ্যাসের কারনে ধীরে ধীরে সেটা এসিডিক হয়ে পড়েছে।

এখন উপায় কি? এখন বাঁচতে হলে দেহটাকে সর্বদা এলকালাইনই করে রাখতে হবে।

দেহটাকে এলকালাইন করে রাখার প্রাকৃতিক উপায়- এলকালাইন খাবার ও পানীয় গ্রহণ, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা, শারীরিক ব্যায়াম করা ইত্যাদি।

কিন্তু আপনি যদি এভাবে আপনার লাইফস্টাইল ১০০% ম্যানেজ করতে না পারেন, বেকিং সোডা হতে পারে শরীরের এলকালাইনিটি (ক্ষারত্ব) ধরে রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি।

সঠিকভাবে নিয়ম মেনে বেকিং সোডা খেলে আপনি শরীরকে এলকালাইন রাখা সহ নানা শারীরিক জটিলতাকে রিমুভ করতে পারেন তথা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।

আর এজন্যই বেকিং সোডাকে বলা হয়েছে সর্ব রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ।

বেকিং সোডা কেন খাব?

স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় আপনি যদি দৈনিক খাবারে ৭০% এলকালাইন খাবার ও ৩০% এসিডিক খাবার খান এবং শারীরিক ও নিঃশ্বাসের ব্যায়াম সহ লাইফস্টাইল মেনে চলেন, তাহলে আপনার বেকিং সোডা খাওয়ার প্রয়োজন হবেনা।

উল্লেখ্য, এলকালাইন খাবার হল- প্রধানত সব্জি ও ফল জাতীয় খাবার এবং এসিডিক খাবার হল—মাছ, মাংস, ডিম, ভাত, রুটি, প্রসেস্‌ড ফুড ইত্যাদি।

আপনি বেকিং সোডা খেতে পারেন, যদি নিচের তিনটি অবস্থার কোন একটি অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পান-

১.   যদি আপনার বডি এসিডিক থাকে অর্থাৎ রক্ত, লালা, প্রশ্রাব এর Ph স্বাভাবিক এর চেয়ে কম থাকে। রক্তের স্বাভাবিক Ph ৭.৩৫ থেকে ৭.৪৫, প্রশ্রাবের ৬.৮ থেকে ৭.০ এবং লালার ৭ থেকে ৭.৩ ইত্যাদি।

২.   যদি আপনার বয়স ৫০+ হয়। কারন ৪৫ বছরের পরে আপনার শরীরে বাই কার্বনেট উৎপাদন কমে যায়। ফলে বাই কার্বনেট বাফারিং সিস্টেম কাজ করতে পারেনা। বাফারিং সিস্টেম মানে হল- বয়স ৪৫ এর নিচে থাকলে আপনার দেহের Ph কম বা বেশি হয়ে গেলে দেহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটাকে স্বাভাবিক সীমায় ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু বয়সজনিত কারনে বাফারিং সিস্টেম ঠিকমত কাজ না করলে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। বেকিং সোডা হতে পারে দেহের বাফারিং সিস্টেমের জন্য একটি সাপোর্ট।

৩.   আপনার যদি পাকস্থলিতে সব সময় এসিডিটি লেগে থাকে-পেট-বুক জ্বলা, পেটে ব্যাথা, গ্যাস ইত্যাদি যদি হয় আপনার নিয়মিত ঘটনা তাহলে বেকিং সোডা নিয়মমাফিক খেতে পারেন। এছাড়া যদি কখনো মাত্রাতিরিক্ত এসিডিক খাবার খেয়ে ফেলেন, যেমন-কোন দাওয়াতে গিয়ে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাহলে পাকস্থলির এসিডিক অবস্থা প্রশমনের জন্য সাময়িকভাবে বেকিং সোডা খেতে পারেন।

যখন তখন বেকিং সোডা খাওয়া কোন ভাল প্র্যাকটিস নয় এবং নিষিদ্ধ।

কোন বেকিং সোডা খাব?

আগেকার দিনে আমরা দেখেছি পেটের অতিরিক্ত এসিডিটি থেকে বাঁচতে অনেকেই খাবার সোডা খেত। খাবার সোডাও সোডিয়াম বাই কার্বনেট। তবে খাবার সোডা আর আমাদের প্রস্তাবিত বেকিং সোডার গ্রেড এক নয়, পার্থক্য আছে।

মুদির দোকানে যে খাবার সোডা বা বেকিং সোডা বা বেকিং পাউডার পাওয়া যায়, সেগুলো খাবেননা। সেগুলো ফাংশনাল ফুড হিসাবে খাওয়ার যোগ্য নয়।

আমরা যে বেকিং সোডা খাওয়ার জন্য সাজেস্ট করব, সেটা হল- ফুড গ্রেড বেকিং সোডা। বিভিন্ন কোম্পানীর উন্নত মানের অর্গানিক ফুড গ্রেড বেকিং সোডা সংগ্রহ করে আপনারা খেতে পারেন। বাংলাদেশে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কিনতে চাইলে আমি সাজেস্ট করব ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের “আলটিমেট অর্গানিক লাইফ (UOL)” থেকে কিনতে।

Food Grade Baking Soda

প্রসঙ্গতঃ অর্গানিক খাবার কি- এ সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক ধারনা না থাকে, তাহলে এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিন- প্রাকৃতিক খাবার নাকি অর্গানিক খাবার- কোনটি খাবেন।

মনে রাখবেন, বেকিং সোডা আর বেকিং পাউডার এক নয়, কিছুটা পার্থক্য আছে।

বেকিং সোডা কাদের জন্য উপযোগী

এ বিষয়টা আমরা ইতোমধ্যেই ফোকাস করেছি। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে- আপনার সাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য সাময়িকভাবে বেকিং সোডা খেতে পারেন। যেমন- পেটে গ্যাস, এসিডিটি, পেট ব্যাথা, বুক জ্বলা, পেট কষা, পেট ফুলে থাকা ইত্যাদি দূর করতে।

এছাড়া বডিকে এলকালাইন অবস্থায় রাখতে মাঝে মাঝে শারীরিক অবস্থা বুঝে বেকিং সোডা খেতে পারেন।

আপনার বয়স যদি ৫০+ হয় তাহলে দেহের বাফারিং সিস্টেম চালু রাখতে নিয়মিতভাবে বেকিং সোডা খেতে পারেন।

বেকিং সোডা খাবার না ওষুধ?

বেকিং সোডা একটি উঁচু মাত্রার এন্টাসিড। অর্থাৎ এসিডের বিপরীতে কাজ করে এমন একটা রিমেডি। তবে এটা খাবার বা ওষুধ কোনটাই নয়। এটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন কেমিক্যালও নয়। এটা একটা পাওয়ারফুল ক্ষার জাতীয় পদার্থ।

আর আমদের প্রস্তাবিত বেকিং সোডায় কোন ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা প্রিজার্ভেটিভ কিছুই নেই। এটা একটা বিশ্বখ্যাত অর্গানিক প্রোডাক্ট।

বেকিং সোডা

  1. Anti-inflammatory বা ইনফ্ল্যামেশন দূর করে।
  2. Anti-bacterial বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
  3. Detoxifying বা টক্সিন দূর করে।
  4. Relaxing বা আরামদায়ক
  5. Soothing বা উপশমকারী
  6. Analgesic বা ব্যাথা নিরাময়কারী
  7. Having anti-cancer properties বা আছে ক্যানসার রোধী উপাদান ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত বেকিং সোডা সেবন নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার কারন হতে পারে।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা বেকিং সোডা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

বেকিং সোডা খাওয়ার পদ্ধতি কি?

বেকিং সোডা খাওয়ার দুটি পদ্ধতি জেনে নিন (উল্লেখ্য- এ দুটি পদ্ধতি ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির ও ডাঃ মুজিবুর রহমান কর্তৃক যৌথভাবে সাজেস্টকৃত)।

Baking Soda Preparation
বেকিং সোডার রসায়ন তৈরি করছেন ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির ও ডাঃ মুজিবুর রহমান

➤ পদ্ধতি-১

সাধারনভাবে এক গ্লাস পানির সাথে আধা চা চামচ (২.৫ মি.লি.) বেকিং সোডা ভালভাবে মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। এভাবে খেলে এটা সাধারনভাবে বডিকে এলকালাইন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

➤ পদ্ধতি-২

এই পদ্ধতিতে আমাদের প্রয়োজন হবে বেকিং সোডার সাথে লেবুর রস বা ভিনেগার।

  1. একটি খালি গ্লাস নিন।
  1. এতে দুই টেবিল চামচ (৩০ মি.লি.) লেবুর রস নিন অথবা দুই টেবিল চামচ কোকোনাট সিডার ভিনেগার নিন।
  1. আধা চা চামচ (২.৫ মি.লি.) বেকিং সোডা চামচে নিয়ে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে গ্লাসে মিশান।
  1. ধীরে ধীরে ফেনা উঠবে। আস্তে আস্তে মিশাতে থাকুন যতক্ষন না ফেনা বন্ধ হয়ে সলিউশনটি স্বাভাবিকভাবে প্রশমিত হয়ে যায়।
  1. এবার পুরো গ্লাস পানিতে ভরে নিন। ভালভাবে নাড়াচাড়া করে নিন।
  1. এবার খেয়ে নিন।

এভাবে খেলে রক্তের এসিডিটি, টক্সিন ইত্যাদিকে নিউট্রালাইজ করতে এবং pH কে নরমালাইজ করতে এবং আমাদের উপস্থাপিত অন্যান্য সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করবে।

মন্তব্য করুন