ওজন বাড়াবেন কিভাবে- ইংল্যান্ডবাসী বাংলাদেশি স্টার ডাঃ তাসনিম জারার পরামর্শ

Me বর্তমানে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি ডাঃ তাসনিম জারা চিকিৎসা জগতে এবং নেটিজেনদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত এবং আলোচিত একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে একজন চিকিৎসক, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক নেত্রী। তাসনিম জারা ‘সহায় হেলথ’ নামক একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে তিনি সুদূর প্রবাসে থেকেও বাংলাভাষী জনগণের জন্য প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তথ্য প্রদান করে যাচ্ছেন।

ওজন বৃদ্ধি কেন প্রয়োজন?

বর্তমান পৃথিবীতে ওজন কম থাকা যত না সমস্যা তার চেয়ে বেশি সমস্যা ওজন বেশি থাকা। পৃথিবীর হাসপাতালগুলো বেশিরভাগ ব্যস্ত ‘অতি ওজন (Overweight)’ বা স্থূলতা থেকে উৎপন্ন রোগের রোগীদের নিয়ে। সুতরাং ‘ওয়েট লস (Weight Loss)’ বা ওজন কমানো নিয়ে আপনি অনলাইনে যত রিসোর্স পাবেন, ওজন বাড়ানো নিয়ে ততটা পাবেন না।

How to gain weight

যাই হোক, ওজন বৃদ্ধি কেন প্রয়োজন, কাদের প্রয়োজন, ওজন বৃদ্ধির প্র্যাকটিক্যাল পথ কি, কি কি সাবধানতা অবলম্বন করবেন- এ সব কিছুই ডাঃ তাসনিম জারা তার প্রেজেন্টাশনে বলেছেন। আমরা তাসনিম জারার পুরো আলোচনাটি সরাসরি তার ভাষায়ই প্রেজেন্ট করছি। এতে তার কথার টোন (Tone) বুঝে ওজন বাড়ানোর পুরো বিষয়টি বুঝা সহজ হবে।

ওজন বৃদ্ধির খাবার

ওজন বৃদ্ধির জন্য সকাল, দুপুর এবং রাত্রে কি খাবেন- সেটা গুরুঅত্বপূর্ণ। আমি প্রতিটি খাবারের ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলব।

সবশেষে বলব- খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সতর্কতার কথা। যেমন- আপনার হয়ত কিছু রোগের কারনে ওজন কমে গেছে। এক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধির পরামর্শ সরাসরি ফলো না করে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।

সকালের নাস্তা

প্রথমেই চলে আসি সকালের নাস্তায়। ওজন বাড়ানোর জন্য সকালের নাস্তায় যে খাবারগুলো যোগ করা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ তার মধ্যে রয়েছে-

দুধ কলা ডিম খেজুর

➤ দুধ

প্রথমেই আসি দুধের প্রসঙ্গে। আমাদের শরীরে যত ধরনের পুষ্টির দরকার তার প্রায় সবগুলোই দুধে পাওয়া যায়।

  1. প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে।
  2. দুধ আমাদের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে
  3. দুধে রয়েছে ভিটামিন বি- যা আমাদের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
  4. আর দুধের বড়ো সুবিধা হল অন্যান্য খাবারের সাথে খুব সহজেই এক গ্লাস দুধ খেয়ে নেওয়া যায়।

এটা আপনাকে ওজন বাড়াতে খুব ভালো সাহায্য করবে।

Milk Banana Egg Date

➤ কলা

  1. কলায় ভিটামিন বি সিক্স আছে।
  2. কলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  3. ভালো পরিমাণে ফাইবার আছে যা আমাদের হজমে সাহায্য করে।
  4. হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানোর সাথে কলার সম্পর্ক আছে।

আবার কলা খুব সহজলভ্য বাজারে সবসময় পাওয়া যায়। খাওয়ার আগে কাটাকাটির কোনও ঝামেলা নেই। তাই সকালবেলাতেই কলা খেয়ে ফেলতে পারেন।

➤ ডিম

  1. ডিমকে বলা হয় প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন।
  2. এতে ভিটামিন এ আছে যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  3. ভিটামিন বি-2 আছে যা আমাদের ত্বককে ভাল রাখে।
  4. জিঙ্ক আছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  5. ডিম অনেক ভিটামিন মিনারেলে সমৃদ্ধ।

এছাড়া ডিম পাওয়া যায় অল্প দামে আর প্রায় সব খাবারের সাথে খাওয়া যায়। তাই সকাল সকাল নাস্তার সাথে ডিম সিদ্ধ খেয়ে নিতে পারেন। এটা আপনার ওজন বাড়াতে ভাল সাহায্য করবে।

ডিম ভাজি কথা বলছি না কারণ অস্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে ভাজলে সেটা আবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

➤ খেজুর

  1. খেজুর অসাধারণ একটা ফল।
  2. ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আছে যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে৷
  3. ফলিক অ্যাসিড আছে যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
  4. ফাইবার আছে যার উপকারিতা একটু আগে বলেছি।

মোট কথা খেজুরের পুষ্টিগুণ অসাধারণ সকালবেলাতেই কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিলে শরীর স্বাস্থ্য দুইটাই উপকার হবে।

আমি এই যে খাবারগুলো কথা বললাম দুধ কলা, ডিম খেজুর এগুলো সকালে খেতে হবে, প্রতিদিন খেতে হবে- এমন না। আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি ওজন বাড়াতে কেন এই খাবারগুলো খাবেন। মোটামুটি সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর কথা বলেছি। এগুলোর গুরুত্ব বুঝে নিলে আপনি প্রতিদিন এর মধ্যে থেকে যথাসাধ্য খাবার সুবিধামতো যুক্ত করতে পারবেন।

এই খাবারগুলো কী পরিমাণে খাবেন সেটা পরবর্তী ধাপে বুঝিয়ে বলছি।

দুপুরের খাবার

Dal Tok Doi Murgir Mangso

➤ ডাল

দুপুরের খাবারে ডাল রাখবেন। পারলে পাতলা ডাল না খেলে ঘন ডাল খাবেন। ডাল আমরা একটু হেলাফেলার চোখে দেখলেও এটা খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে গরুর মাংস খাসির মাংস থেকে আমরা যেমন প্রোটিন পাই ডাল থেকেও তেমন প্রোটিন পাই।

কিন্তু গরুর মাংস এমন কিছু ক্ষতিকর চর্বি থাকে ডালে সেই ঝুঁকি নেই। তারপর আর পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিজ সহ আরও অনেক ধরনের পুষ্টি আছে। এই সবগুলোই সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন।

ডাল আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে বুঝিয়ে বলি।আমাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি তে কোটি কোটি জীবাণু আছে। এই জীবাণু আমাদের অসুস্থ করে না বরং সুস্থ রাখে। এরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভিটামিন তৈরি থেকে শুরু করে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়। এই জীবাণুগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য উপকারী জীবাণু বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ কিছু খাবার আছে। এগুলোকে বলা হয় প্রিবায়োটিক খাবার।

ডাল হলো এক প্রকারের প্রিবায়োটিক খাবার ডালের নির্দিষ্ট কিছু উপাদান আমাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি উপকারী জীবাণুগুলির খাদ্য তাঁদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে ডাল রাখতে পারেন। আর আগে কলার কথা বলেছি সেটাও এক ধরনের প্রিবায়োটিক খাবার অর্থাৎ উপকারী জীবাণুর খাদ্য।

➤ টকদই

তার পর দুপুরের খাবার শেষে আপনার একবাটি টকদই খেতে পারেন। টকদই দুধ দিয়ে বানানো। তাই দুধের পুষ্টি তো পাবেনই। সাথে আরও কিছু বোনাস আছে।

টক দইতে অনেক উপকারী জীবাণু থাকে একটু আগে নাড়িভুঁড়ি জীবাণুর কথা বললাম, টক দই খেলে আপনি সেগুলোর সাথে আরও নতুন করে অনেকগুলো উপকারী জীবাণু যোগ করতে পারেন। অর্থাৎ বাইরে থেকে আপনি ভাল জীবাণু পেটের ভিতরে ঢোকাচ্ছেন এগুলো পরে ক্ষতিকর জীবাণু থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।

অনেকে বলতে পারেন মিষ্টি দইও তাহলে খাওয়া যায়। মিষ্টি দই উপকারী জীবাণু আছে। তবে মিষ্টি দইতে সাধারণত অনেক পরিমাণে চিনি দেওয়া থাকে। বেশি চিনি, অস্বাস্থ্যকর তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। সেগুলো বেশি খেলে শরীরের চর্বি বেড়ে ওজন বাড়তে পারে।

তাই আমার পরামর্শ হবে দুই উপকারিতা পেতে চাইলে টক দই খাওয়া, মিষ্টি দই কখনওই খাওয়া যাবে না। তা না কখনও ইচ্ছে হলে পরিমিত পরিমাণে খেলে। তবে নিয়মিত খাবেন না।

➤ মুরগির মাংস

তার পর দুপুরের খাবারে মুরগির মাংস রাখতে পারেন। সাধারণত যদি আপনি এক টুকরা খান এখন দুই টুকরা করে খাওয়ার চেষ্টা করেন।

আপনাকে অনেকেই গরুর মাংস খাসির মাংস বেশি করে খাওয়ার কথা বলতে পারে। গরুর মাংস খাসির মাংস খেয়ে ওজন বাড়ানো সম্ভব। তবে আমি এগুলো নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেব না৷ এগুলোর সাথে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে। তাই ওজন বাড়ানোর সময় এগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভাল।

গরুর মাংস খাসির মাংস থেকে যে প্রোটিন আসত মুরগির মাংস ডিম ডাল থেকে আপনি অনায়াসেই পেয়ে যাবেন।

রাতের খাবার

এখন আসি রাতের খাবারে।

দুপুরে যে খাবার গুলোর কথা বললাম সেটা রাতের জন্য প্রযোজ্য। দুপুরে ব্যস্ততা বাসার বাইরে থাকার কারণে যদি কিছু মিস হয়ে যায় তার রাতের খাবার যোগ করার সুযোগ থাকে।

বিকালের নাস্তার আইটেম (স্ন্যাক্‌স)

এবার আসি কিছু নাস্তার আইটেমে-

Nut Seed Avocado

➤ বাদাম

ওজন বাড়ানোর খুব ভাল রাস্তা হচ্ছে বাদাম খাওয়া। যেকোনও ধরনের বাদাম খেতে পারেন। চিনাবাদাম কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম- যেটা আপনার জন্য সুবিধা হয়।

বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে, অনেক ধরনের মিনারে্‌ ভিটামিন, ফাইবার আছে। এটা প্রোবায়োটিক খাবার অর্থাৎ পেটের নাড়িভুঁড়ি তে উপকারী জীবাণু কে সুস্থ রাখে। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য নাস্তায় কয়েকটা বাদাম খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পরেও খেতে পারেন।

বাদাম কেনার সময় খেয়াল রাখবেন। এতে যাতে অন্য কিছু মেশানো না থাকে, যেমন চিনি, লবণ ইত্যাদি। বিশেষ করে যাঁরা দেশের বাইরে থাকেন, তাঁরা এটা খেয়াল রাখবেন৷ কারণ বাজারে অনেক ধরনের চিনি লবণ মেশানো বাদাম প্যাকেট কিনতে পাওয়া যায়।

➤ কিশমিশ

তারপর নাস্তার জন্য বাদামের সাথে কিশমিশ মিশিয়ে খেতে পারেন। কিশমিশ যেহেতু আঙুর ফল শুকিয়ে বানানো হয় অল্প পরিমাণ কিসমিসের অনেক ভিটামিন আর মিনারেল থাকে।

তবে কিসমিস খেলে কারও কারও দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ সেটা ঠেকাতে কিসমিস খালি খালি না খেয়ে বাদাম বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাবেন। কিসমিস খাবারে যোগ করতে পারলে ওজন বাড়াতে সেটা অনেক সহায়তা করবে।

➤ বিভিন্ন ধরনের বিচি

ওজন বাড়ানোর আর একটি উপায় হল খাবারের সাথে বিভিন্ন ধরনের বিচি যুক্ত করা। যাদের সুযোগ আছে তাঁরা মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বীজ, তিলের বীজ- ভাত বা তরকারীর ওপর হালকা ছিটিয়ে খেতে পারেন।

একেকটা বীজ নানা ধরনের পুষ্টি বহন করে।

➤ অ্যাভোকাডো

তারপর ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো খেতে পারেন সুযোগ থাকলে। এগুলোতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে। দেশে এই ফলটা সহজে পাওয়া যায় না। পেলেও অনেক দাম৷

দেশের বাইরে থেকে অনেকেই আমার ভিডিও দেখেন। আপনাদের বাজারে সহজেই পাওয়া গেলে এটাও মেনুতে রাখতে পারেন।

অনেকেই ওজন বাড়ানোর জন্য সাগু দানা বা কাস্টার্ড পুডিং খাওয়ার কথা বলেন। এগুলো খেয়ে ওজন বাড়ানো সম্ভব। তবে আমি এগুলোর পরামর্শ দেই না। কেন দিই না। কেন দিই না দেখে নিন-

ওজন বাড়াতে সাগু দানা কেন খাবেননা

সাগুর প্রায় পুরোটাই শর্করা। অর্থাৎ শুধুমাত্র এক ধরনের পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে। একশ গ্রাম। সাবুদানায় প্রোটিন আর ফ্যাটের পরিমাণ এক গ্রামের থেকেও কম থাকে। আর ভিটামিন মিনারেল থাকে খুব অল্প। তাই এটা খুব পুষ্টিকর একটি খাবার না।

এটা নিয়মিত খেলে ওজন বাড়তে পারে। তবে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তার চেয়ে বরং যে খাবারে ওজন বাড়ে আর পুষ্টিও অনেক সেগুলো খেয়ে ওজন বাড়ানো শ্রেয়।

ওজন বাড়াতে কাস্টার্ড পুডিং কেন খাবেননা

কাস্টার্ড পুডিং এ সাধারণত অনেক পরিমাণে চিনি দেওয়া থাকে। একটু আগে মিষ্টি দই নিয়ে যা বললাম এখানেও তাই। অতিরিক্ত চিনি বা তেল চর্বিযুক্ত খাবার যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেটা ওজন বাড়ানোর সময় এগিয়ে চলা ভালো। না হলে শরীর চর্বি জমে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি যদি চিনি ছাড়া শুধু ডিম, দুধ, ফলমূল দিয়ে কাস্টার্ড পুডিং বানিয়ে খেতে চান সেটা খেতে পারেন।

তাহলে তিন বেলার খাবার আর নাস্থা (স্ন্যাক্‌স) এর কথা বললাম। এখন বলছি এই খাবারগুলো কী পরিমাণে খাবেন- এ বিষয়ে।

উল্লেখিত খাবারগুলো কী পরিমাণে খাবেন

আমি অনেকগুলো খাবারের কথা বলেছি। এর মধ্যে সবার সবকিছু ভাল লাগবে তা নয়। বাসায় কোনো বেলা থাকবেন তো আরেক বেলা থাকবেন না।

আমি দেখিয়ে দিচ্ছি- নিচের তালিকা থেকে দেখে নিন কোন খাবারে কতটুকু পরিমাণে কত ক্যালোরি থাকে। যেই থাবারই আপনি পছন্দ করেন না কেন, মিলিয়ে নেবেন যাতে সারা দিনে অতিরিক্ত তিনশ থেকে পাঁচশ ক্যালোরি খাওয়া হয়।

সকালের নাস্তায় যা যোগ করতে পারেন

  1. ১ কাপ দুধ (২৪৪ গ্রাম) – ১৪৬ ক্যালোরি
  2. ১টা মাঝারি কলা (১১৮ গ্রাম) – ১০৫ ক্যালোরি
  3. ১টা ডিম (৫০ গ্রাম) – ৭১.৫ ক্যালোরি
  4. ১০০ গ্রাম খেজুর – ২৭৭ ক্যালোরি

দুপুরের খাবারে যা যোগ করতে পারেন

  1. ১ কাপ রান্না করা ডাল (১৯৮ গ্রাম) – ২৩০ ক্যালোরি
  2. ১ কাপ টক দই (২৪৫ গ্রাম) – ১৪৯ ক্যালোরি
  3. ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস – ১৭৯ ক্যালোরি

বাদাম ও কিসমিশ

  1. ১ আউন্স কাজুবাদাম (২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৫৭ ক্যালোরি
  2. ১ আউন্স কাঠবাদাম (২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৬৪ ক্যালোরি
  3. ১ আউন্স পেস্তাবাদাম (২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৫৯ ক্যালোরি
  4. ১ আউন্স চিনাবাদাম (২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৬১ ক্যালোরি
  5. ১ আউন্স কিসমিস (২৮.৩৫ গ্রাম) – ৮৪.৮ ক্যালোরি

বীজ

  1. ১ আউন্স মিষ্টিকুমড়ার বিচি ( ২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৬৩ ক্যালোরি
  2. ১ আউন্স সূর্যমুখীর বিচি ( ২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৭৫ ক্যালোরি
  3. ১ আউন্স তিলের বীজ (২৮.৩৫ গ্রাম) – ১৬১ ক্যালোরি

আপনি নিয়মিত যা খান, এই খাবারগুলো তার সাথে যোগ করবেন। নিয়মিত খাবার বাদ দিয়ে শুধু এই খাবার খেতে হবে তা নয়।

এর চেয়ে বেশি ক্যালোরি খেলে আরও দ্রুত ওজন বাড়বে। তবে দ্রুত ওজন বাড়ানোর চেয়ে ধীর গতিতে ওজন বাড়ানো উত্তম। দ্রুত ওজন বাড়লে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে।

ওজন বাড়াতে ব্যায়াম

ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়ামের উপর জোর দিতেই হবে। ব্যায়াম শরীরের পুষ্টি শোষনে এবং মেটাবলিজম এ সাহায্য করতে। এছাড়া ব্যায়ামে মাস্‌ল (মাংসপেশি) বৃদ্ধি পাবে। এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাস্‌ল অধিক প্রোটিন শোষনের পরিবেশ তৈরি করবে।

Strength Training

ওজন বাড়ানোর জন্য খুব ভাল ব্যায়াম হচ্ছে স্ট্রেংথ ট্রেনিং (Strength Training) । শরীরে মাস্‌ল (Muscle) বা মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে জিমেই যেতে হবে এমন না। বাসাতেই শুরু করতে পারেন এই ব্যায়ামগুলো।

এরকম কিছু ব্যায়াম হল-

  1. Lunge
  2. Squat
  3. Plunk
  4. Push-up

এই শব্দগুলো লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলেই অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন।

অনেকেই ভাবতে পারেন যে ব্যায়াম করলে শরীরের শক্তি খরচ হয়ে যাচ্ছে। ক্যালরি বার্ন হয়ে যাচ্ছে। তাই ওজন বাড়ানোর সময় বোধহয় ব্যায়াম করার দরকার নাই। এমন চিন্তার কোন যুক্তিসংগত কারন নেই। ওজন বাড়ানোর সময় আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যালরি গ্রহনের সক্ষমতা বাড়বে। অতিরিক্ত ক্যালরি শুধু মাস্‌ল বা মাংসপেশি বৃদ্ধি করবে, যা অবশ্যই কাঙিত। ব্যায়ামের সময় অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন করলেও শরীরে মেদ বা চর্বি জমার সম্ভাবনা কমবে।

কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সুস্থ থাকার জন্য সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম করার অভ্যাস একদমই না থাকলে অল্প অল্প করে শুরু করবেন৷ তবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওজন বাড়ানোর জন্য খাবার পরিবর্তন আনার পাশাপাশি অবশ্যই ব্যায়াম করবেন।

সতর্কতা

সতর্কতামূলক কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।

সতর্কতা-১

প্রথম সতর্কতা হল আপনার ওজন বাড়ানো দরকার কি না সেটা বোঝা। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাদের ওজন বাড়িয়ে স্বাভাবিক আনা প্রয়োজন। কারণ অল্প ওজনে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দুর্বল হওয়া, অপুষ্টিতে ভোগা, সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা, মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

সতর্কতা-২

দুই কিছু রোগের কারণেও ওজন কম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন। শারীরিক কিছু রোগের কারনে ওজন কমতে পারে, যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

আবার কিছু মানসিক রোগের কারণেও ওজন কমে যেতে পারে, যেমন- ডিপ্রেশন অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়া ইত্যাদি।

তাই ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করার আগে প্রথমেই আপনি একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। শারীরিক বা মানসিক কোনও অসুস্থতার কারণে আপনার ওজন কম কিনা সেটা তিনি খতিয়ে দেখতে পারবেন৷

আবার যদি খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নিচের ছোটখাট সমস্যাগুলোর কারনে দীর্ঘদিন আপনার খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম ঘটে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করে সসাধান করে নিবেন। এগুলো কোনও গুরুতর রোগের লক্ষণ কিনা সেটা তিনি যাচাই করে দেখবেন। যেমন-

  1. ঠিকমতো খেতে পারছেন না
  2. মুখে অরুচি
  3. মুখে ঘা
  4. খাওয়ার পরে পেটে অস্বস্তি হওয়া
  5. পেট ফাঁপা লাগ্‌ ব্যথা করা
  6. খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া
  7. মনে হয় খাবার গলায় আটকে থাকা
  8. খাবার গিলতে ব্যথা করা
  9. অল্প খাবার খেয়ে পেট ভরে গেছে এমন মনে হওয়া
  10. খুব ক্লান্ত লাগা
  11. কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়া
  12. পায়খানার অভ্যাসে পরিবর্তন আসা, যেমন মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বার করে পায়খানায় যাওয়া লাগছে ইত্যাদি।

বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা

এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা হল- যদি বিনা কারণে ওজন কমে যেতে থাকে, যদি মনে হয় কোনও কারণ ছাড়া কোনও চেষ্টা ছাড়া আপনার ওজন কমে যাচ্ছে, তাহলে হেলাফেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। এটা ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। তাই এটা বিশেষভাবে মনে রাখবেন।

সতর্কতা-৩

ওজন বাড়ানোর জন্য নিজে নিজে কোনও ওষুধ খাবেন না। কেউ আপনাকে টাকার বিনিময়ে মোটা হওয়ার ওষুধ ছাড়তে পারে। সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। পারলে এক জন নিউট্রিশনিস্ট এর সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

সতর্কতা-৪

খাবারের পরিমাণ আর ধরণের পরিবর্তন আনলে অনেক সময় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবার পরিবর্তনগুলো আস্তে আস্তে আনবেন। যেসব খাবারে ফাইবার আছে যেমন ফলমূল, ডাল বাদাম, শাকসবজি এগুলোর পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে পানি আর পানি জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াবে্ন। তারপরও যদি মনে হয়- এই খাবার গুলোতে মনে হচ্ছে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাহলে সেগুলো এড়িয়ে চলবেন।

আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন