
হলুদ আমাদের এই উপমহাদেশের একটি বহুল ব্যবহৃত মসলা জাতীয় ভেষজ উপাদান, যা সুপ্রাচীন কাল থেকে এখানে রান্নায় এবং স্বাস্থ্যগুণসমৃদ্ধ ঔষধি দ্রব্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলুদ প্রদাহ দূর করে, ইমুনি সিস্টেম বিল্ড আপ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং আরো অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান করে।
রান্নাবান্নায় হলুদের ব্যবহার আমাদের ঐতিহ্য। তবে তরকারিকে সুস্বাদু ও রঞ্জিত করার জন্য হলুদের ব্যবহার আর নানা রকম জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হলুদ খাওয়া এক কথা নয়।
এখানে আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে আরোগ্য লাভ করতে এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রান্নার বাইরে আলাদাভাবে হলুদ খাওয়ার উপকারিতার কথাই তুলে ধরব। সেটা হতে পারে হলুদের চা বা জুস আকারে।
চলুন কিভাবে তা দেখে নিই-
স্বাস্থ্য সমস্যায় হলুদের চা বা জুস
হলুদ মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি সুপার ফুড। স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে আমরা হলুদের চা বা জুস- যাই বলুন- নির্দিষ্ট নিয়মে বানিয়ে প্রতিদিন খেতে পারি। এর কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
হলুদের আছে অনেক অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা যা আমরা পরবর্তী ধাপে প্রেজেন্ট করব। শেষে থাকবে হলুদের জুস বানানোর ফর্মূলা (রেসিপি)।
চলুন এর আগে মেডিসিনাল ফুড হিসাবে হলুদ সম্পর্কে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই।
স্বাস্থ্য সমস্যায় হলুদ কিভাবে কাজ করে?
হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান হল কারকিউমিন, যা প্রদাহ এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। ঔষধি উপাদান হিসাবে হলুদ সাধারনত খাওয়া হয় ব্লাক পিপার বা গুল মরিচের গুড়ার সাথে মিশিয়ে। শুধু হলুদ খেলে এর কারকিউমিন রক্তে সহজে শোষিত হতে পারেনা। গুল মরিচে উপস্থিত পাইপারিন হলুদের কারকিউমিনের শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা হলুদের স্বাস্থ্য উপকারিতা বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
জুস হিসাবে আমরা কোন হলুদ খাব?
রান্নায় ব্যবহৃত সাধারন গুড়া হলুদ নয় বা জমি থেকে তোলা কাঁচা হলুদও নয়। আমরা সাজেস্ট করব- আন্তর্জাতিক মানের ও ব্রান্ডের “Karkuma Organic Turmeric Immune Booster” প্রোডাক্টটি। কারকুমার অর্গানিক হলুদ বুস্টার কেন আপনি খাবেন- সে কথাই পড়ে আসছি। এর আগে জেনে নিই কেন আপনি সাধারন হলুদের গুড়া বা কাঁচা হলুদ এভয়েড করবেন।
➤ কেন সাধারন হলুদ বাদ দেবেন
আপনি সাধারন হলুদের গুড়া বা কাঁচা হলুদ রিমেডি বা রোগের প্রতিষেধক হিসাবে খাবেননা। কারন- প্রথমতঃ হলুদের যে প্রধান সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন, যা আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বেনিফিট দেয়, সেটার মাত্রা সাধারন হলুদে অত্যন্ত কম থাকে- শতকরা প্রায় ১ থেকে ৬ ভাগ।
আপনার যদি প্রতিদিন ১ গ্রাম কারকিউমিনেরও প্রয়োজন হয়, তার জন্য প্রতিদিন আপনাকে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম হলুদ খেতে হবে, যা অসম্ভব। কিন্ত আন্তর্জাতিক মানের অর্গানিক হলুদ আপনি ১ থেকে ২ গ্রাম খেলেই আপনি কাঙ্খিত কারকিউমিন পেয়ে যাবেন।
দ্বিতীয়তঃ আপনি সাধারন হলুদ যেখান থেকেই সংগ্রহ করেন না কেন, এর বিশুদ্ধতা বা ভার্জিনিটি (Virginity) সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারবেননা।
হলুদের গুনগত মানের দিক থেকে আপনি যে সমস্ত চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন তা হল- এটা হতে পারে জেনেটিক্যালি মডিফাইড বা জিএমও (GMO), চাষাবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে এতে মিশ্রিত হতে পারে বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং কীটনাশক, এতে মিশ্রিত থাকতে পারে বিভিন্ন হেভি মেটাল ও প্রিজার্ভেটিভ ইত্যাদি। সুতরাং যা আপনি জুস হিসাবে পান করবেন, সেই মানহীন খাবার সস্তায় ক্রয় করে কি আপনি স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সেক্রিফাইস করবেন?
➤ কেন হলুদের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ব্যবহার করবেন
আমরা হলুদের যে ব্রান্ডটি সাজেস্ট করছি সেটা হল- অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড (Organic Nutrition Ltd.) এর উৎপাদিত “কারকুমা অর্গানিক টার্মারিক ইমিউনি বুস্টার।” এটি বাংলাদেশে তৈরি একটি হলুদের প্রোডাক্ট, যা একটি আন্তর্জাতিক মানের এবং একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এই প্রোডাক্ট।
আপনি কেন হলুদের এই ব্রান্ডটি ব্যবহার করবেন-
- ☀ এটা FDA এবং USDA এর Organic সার্টিফিকেটধারী একটি ফ্যাক্টরি।
- ☀ এটি আমদানীকৃত শতভাগ অর্গানিক হলুদ থেকে তৈরি হয়
প্রসঙ্গতঃ অর্গানিক খাবার কি- এ সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক ধারনা না থাকে, তাহলে এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিন- প্রাকৃতিক খাবার নাকি অর্গানিক খাবার- কোনটি খাবেন।
- ☀ কোনো প্রকার জেনেটিকাল মডিফাই মুক্ত (Non-GMO), কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভ ছাড়া উৎপাদিত। জি.এম.ও (GMO) ফুড কি- এই লিঙ্ক থেকে জেনে নিন।
- ☀ উচ্চ কারকিউমিন যুক্ত
- ☀ এর সাথে ব্ল্যাক পিপার বা গুল মরিচ যুক্ত; সুতরাং হলুদের জুস তৈরিতে শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুল মরিচেরে প্রয়োজন নেই।
কারকুমা টার্মারিক বুস্টার কোথায় পাব, দাম কত?
এই ব্রান্ডটি আপনি বিভিন্ন স্থানে পেতে পারেন, অনলাইন থেকেও নিতে পারেন। তবে প্রোডাক্টের ইনটেক প্যাকেটটি দেখে শুনে নেবেন। (ছবি দেখুন)। এটা পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হতে পারে- ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের “আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ”।
বর্তমানে ৮০ গ্রামের কৌটার দাম- ৩৯০.০০ টাকা। একটি ৮০ গ্রামের কৌটা ১ থেকে ২ মাস চলে যাবে।
হলুদ খাওয়ার উপকারিতা
নির্দিষ্ট নিয়মে হলুদের জুস বা চা করে খাওয়ার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health Benefits) রয়েছে। এই সমস্ত সমস্যায় আপনি যদি ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলেও হলুদ খেলে উপকার পাবেন, আর যদি আক্রান্ত না হয়ে থাকেন তাহলেও হলুদ খেলে ভবিষ্যতে এই সমস্ত রোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবেন।
একনজরে দেখে নিন হলুদ খাওয়ার ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-
➤ প্রদাহ কমায়
টারমারিকের প্রধান সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন (Inflammation) কমাতে সাহায্য করে। এটা হাড়ের প্রদাহ আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশমেও সমানভাবে কার্যকরী।
➤ এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন
টারমারিকের কারকিউমিন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন, যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং একই সাথে আমাদের তারুণ্য বা বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।
➤ হজমে সহায়তা করে
হলুদ পেটের বা পাকস্থলির স্বাস্থ্য উন্নত করে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
➤ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কারকুমা অর্গানিক টার্মারিক বুস্টার এর সাথে মিশ্রিত ব্ল্যাক পিপার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ তথা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
➤ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির হার কমিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
➤ ইমিউন সিস্টেম বুস্টার
টারমারিক এবং ব্ল্যাক পেপার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
➤ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
কারকিউমিন রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
➤ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
কারকিউমিন এবং ব্ল্যাক পেপার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া আলঝাইমার এর মত মস্তিষ্কের স্মৃতিলোপজনিত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
➤ যকৃতের সুরক্ষা দেয়
টারমারিকের কারকিউমিন যকৃতের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং যকৃতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
➤ ত্বক উজ্জ্বল করে
হলুদে থাকা কারকিউমিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বককে মসৃণ করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে।
হলুদের জুস বা চা বানানোর নিয়ম কি?
আমরা এখানে হলুদের জুস খাওয়ার দুটি পদ্ধতি শেয়ার করব, যা বাংলাদেশে লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের অগ্রপথিক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির এবং ডাঃ মুজিবুর রহমান কর্তৃক যৌথভাবে সাজেস্টেড)।
➤ পদ্ধতি-১
সাধারনভাবে এক গ্লাস পানির সাথে ১ চা চামচ (৫ মি.লি.) অর্গানিক টার্মারিক বুস্টার ভালভাবে মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। এভাবে খেলে এটা আপনার বডিতে সাধারনভাবে কাজ করবে-প্রদাহ দূর করবে, ইমিউনিটি শক্তিশালী করবে, ত্বকের ঊজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে ইত্যাদি।
কিন্তু হলুদের পূর্নাঙ্গ উপকারিতা পেতে আপনাকে পদ্ধতি-২ অনুসরন করতে হবে।
➤ পদ্ধতি-২
এই পদ্ধতিতে হলুদ খেতে আমাদের আরো দুটি উপাদান প্রয়োজন হবে- এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এবং অর্গানিক মধু।
- ☀ প্রথমে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি (প্রায় ৩৭°C) নিন। বেশি গরম হলে হলুদের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে।
- ☀ ১ চা চামচ (৫ মি.লি.) কারকুমা অর্গানিক টার্মারিক ইমিউনি বুস্টার ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
- ☀ এর সাথে এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল যোগ করে নিন।
- ☀ সাথে এক টেবিল চামচ অর্গানিক মধু যোগ করুন।
- ☀ ভালভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিন।
- ☀ এবার খেয়ে নিন।
এভাবে খেলে আমাদের নির্দেশিত সবগুলো রোগের উপকার পাবেন।
হলুদের জুস বা চা খাওয়ার নিয়ম
আমাদের উল্লেখিত রোগগুলো নিরাময়ের জন্য বা রোগগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য উল্লেখিত নিয়মে প্রতিদিন বিরতিহীনভাবে এই হলুদের জুস খেতে পারেন, এর কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।
মধু খাওয়ার ক্ষেত্রে যদি ডায়াবেটিস এর কারনে নিষেধাজ্ঞা থাকে, তবে মধু বাদ দিতে পারেন।
এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল একটা ভাল কোলেস্টেরল (Good Cholesterol) এর উৎস, যা খারাপ কোলেস্টেরল (Bad Cholesterol) বরং ধ্বংস করে। আপনার হযমজনিত সমস্যা থাকলে সম্পূর্ণ জুসটি আপনি নাস্তা হিসাবে খেতে পারেন।